এমপি সার্কেল, আনন্দ-বিনোদন ও বিশেষ প্রতিবেদন ডেক্স:
অনেকদিন হয় রানের দেখা পাচ্ছিলেন না সৌম্য সরকার। তবুও দলে সুযোগ পাওয়ায় বেশ কথা শুনতে হয়েছে কোচ ও নির্বাচক প্যানেলকে। ম্যাচের আগের দিনও সৌম্যকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে হাথুরুসিংহেকে। সেখানেও প্রিয় শিষ্যকে আগলে রেখেছেন কোচ। অবশেষে ব্যাট হাতে কোচের সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন সৌম্য সরকার। তার দেড়শো ছাড়ানো ইনিংসে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে কিউইদের বিপক্ষে এই টাইগার ব্যাটারের খেলা অনবদ্য ১৬৯ রানের ইনিংসের সুবাদেই ৪৯.৫ ওভারে ২৯১ রান করে অল আউট হয় বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে চার বল খেলে শূন্য রানে আউট হওয়ায় এবং বল হাতে বাজে পারফর্ম করায় আজকের ম্যাচে একাদশে সৌম্যকে রাখা হবে কিনা তা নিয়ে ছিল শঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত সৌম্যকে নিয়েই দল সাজায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। আর এই সিদ্ধান্ত আজ পুরোপুরি সফল হয়েছে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক হাকানোর পাশাপাশি শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে গেছেন সৌম্য।
বাংলাদেশের জার্সিতে চার বছর পর ফিফটির করা সৌম্য ১১৬ বল খেলে আজ নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নিয়েছেন। পাঁচ বছর শতক হাঁকানো সৌম্য শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ১৫১ বলে ১৬৯ রান করে, ২২টি চারের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ২টি ছয়। দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের, তিনি করেছিলেন ১২৮ রান।
এদিকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ান কোনো ওপেনারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটি ছিল শচীন টেন্ডুলকারের। সাবেক এই ভারতীয় ওপেনার করেছিলেন ১৬৩ রান। আজ ১৬৯ রান করে শচিনের সেই রেকর্ড ভেঙেছেন সৌম্য। একই সঙ্গে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও এখন এটিই।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় ১১ রানে ওপেনার এনামুল হক বিজয় ২ রান করে মিলনের শিকার হয়ে ফিরে যান। বিজয়কে হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই অধিনায়ক শান্তকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ডাফি। দলের স্কোর তখন ৩৬ রান। এদিন আরও একবার ব্যর্থ অভিজ্ঞ লিটন দাস। ব্যাট হাতে ৬ রান করার পর ডাফির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। চতুর্থ উইকেটে তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। দলীয় ৮০ রানে হৃদয় রান আউটের ফাঁদে পড়লে ভাঙে জুটি।
পঞ্চম উইকেটে মুশফিককে সঙ্গে করে দলের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সৌম্য সরকার। এ দুজনে গড়েন ৯১ রানের জুটি। দলীয় ১৭১ রানে মুশফিক ৫৭ বলে ৪৫ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে জুটি। ব্যক্তিগত ৯২ রানে সৌম্যকে জীবন দেন উইল ইয়ং। এটি ছিল ম্যাচে চতুর্থবার জীবন পাওয়া। এর আগে ৫০-৬০ রানের মাঝে জীবন পেয়েছেন তিনবার। ৯০-এর পর গিয়ে আরেকবার।
এরপর আর ভুল করেননি সৌম্য। ইনিংসের ৩৯.১ ওভারের সময় অশোকের বল অফ সাইডে ঠেলে দিয়েই শূন্যে লাফ দেন সৌম্য। ব্যাটের ওপর হেলমেট নিয়ে দুহাতে ধরে করেন ধ্যানের ভঙ্গি। সেই সঙ্গে সৌম্য পেলেন ক্যারিয়ারে তৃতীয় শতক। দ্বিতীয় শতকটি এসেছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে। শতকে যেতে তার লেগেছে ১১৬ বল। এটি ছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে চতুর্থ কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারের সেঞ্চুরি।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে স্বীকৃত ক্রিকেটে সর্বশেষ শতকের দেখা পেয়েছিলেন সৌম্য। এবার জাতীয় দলে এসেছেন বিস্ময় জাগিয়েই, তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিতে ভরসা রাখা হয় তার ওপর। প্রথম ম্যাচে ০ রানে ফিরলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টিম ম্যানেজমেন্টের সে আস্থার প্রতিদান দিলেন সৌম্য।
এরপর ৬ষ্ঠ উইকেটে মিরাজকে নিয়ে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন সৌম্য। মিরাজ ২৬ বলে ১৯ অশোকের শিকার হলে ভাঙে জুটি। অপর প্রান্তে সৌম্য নিজের সাবলীল খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। দলীয় ২৯০ রানের সময় সৌম্য ১৬৯ রানে ফেরেন। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৫১ বলে ২টি ছক্কা ও ২২টি চারে। এরপর ১ বল আগেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা।
এক সেঞ্চুরিতে সৌম্য ছাড়িয়েছেন ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকারকে। নিউজিল্যান্ডের কোনো এশিয়ান ব্যাটারের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক এখন সৌম্য। আগের যে রেকর্ডটি ছিল টেন্ডুলকারের। তিনি ২০০৯ সালে ক্রাইস্টচার্চে করেছিলেন অপরাজিত ১৬৩ রান। সেই সঙ্গে সৌম্য চতুর্থ বাংলাদেশি ব্যাটার যিনি দেড়শো পেরুলেন। এর আগে তামিম ও লিটন দাস দেড়শোর মাইলফলক স্পর্শ করেন। যেখানে তামিমের রয়েছে দুটি ইনিংস।
১২৯ রান করার সঙ্গে সঙ্গে সৌম্য ছাড়িয়ে যান মাহমুদউল্লাহকে। ২০১৫ সালে কিউই সফরে মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছিলেন। সেবার তিনি ১২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। যেটি এতদিন ছিল কিউইদের মাটিতে কোনো বাংলাদেশির সর্বোচ্চ ইনিংস। আজ সেটিকে টপকে গেলেন সৌম্য।