এমপিসার্কেল, সম্পাদকীয় সংযোগঃ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকের সব ধরনের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের মাধ্যমে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট প্রশাসনের ব্যর্থতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা থেকে বাঁচতে এমন ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতির সব অতীত গৌরব আজ ধূলিসাৎ হওয়ার উপক্রম। অথচ কী ঝকঝকে ছিল ছাত্ররাজনীতির চেহারা! বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এ দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল ছাত্ররা। সে দিনের ছাত্ররাজনীতি কি আজকের ছাত্রদের প্রেরণা দেয়? বরং ছাত্ররাজনীতিতে এখন চলে অস্ত্রের ঝনঝনানি, ন্যায়-নীতিহীন অসুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হয়; যা ছাত্ররাজনীতি তথা গোটা ছাত্রসমাজকে কলুষিত করছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায় কীভাবে সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। প্রায় দুই যুগ ধরে অসুস্থ রাজনীতির অন্ধগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সব সময়ই ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ নিয়েই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী। এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আছে, অপকর্ম করছে ছাত্রলীগ। যখন বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারে ছিল, তখনো একই কাজ করেছে ছাত্রদল। সম্প্রতি আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড সামনে এসেছে। শুধু বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১১ বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রলীগ নামধারীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অস্থির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সরকারি সম্পদ ধ্বংসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদর্শিক এই ছাত্র সংগঠনটি। টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দলটির সভাপতি শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে সম্প্রতি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। সর্বশেষ আবরারকে হত্যায় প্রমাণিত হয়েছে যে কত নৃশংস হতে পারে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদধারী নেতা। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের তাণ্ডব-সন্ত্রাস পুলিশ দেখেও দেখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও তাদের ঘাঁটাতে চায় না। এভাবে তো চলবে না। বুয়েট প্রশাসন শক্ত হলে আবরারকে হয়তো বাঁচানো যেত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কেউ খুনি হোক- এটাও চাই না। আবার বিশ্ববিদ্যালয় মানবিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তচিন্তার পাদপীঠ না হয়ে সব ধরনের রাজনীতিমুক্ত হয়ে একটা কূপমণ্ডুক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক- সেটাও চাই না। আমরা মনে করি, সরকারকেও তার ভাবমূর্তির স্বার্থেই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস মোকাবেলায় কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ কোনো সমাধান নয়। দুর্বৃত্তায়িত শক্তিকে অপসারণ করে ছাত্ররাজনীতি স্বাধীনভাবে করতে দিতে হবে। ছাত্ররাজনীতি কমানো নয়, তা উন্মুক্ত করে দেয়াই হবে সমাধান।
শ্যামল দত্ত, সম্পাদক, দৈনিক ভোরের কাগজ