এমপি সার্কেল, সুশাসন চক্র ডেক্স:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে সাড়ে সাত লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৭ হাজার সদস্য মাঠে নামবেন নির্বাচনের ১০ দিন আগেই।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিজিবি সবার আগে মাঠে নামবে। ভোটের পরে দুই দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের আগে ১০ দিন, মোট ১৩ দিনের জন্য এই বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। তবে প্রয়োজন হলে আরও বেশি দিন তাদের রাখা হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে- পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও কোস্টগার্ডকে বোঝায়। আর সশস্ত্র বাহিনী বলতে নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী ও সেনা বাহিনীকে বোঝায়। গতবারের মতো এবারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হতে পারে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের লোকবল ও চাহিদার কথা জানিয়েছে ইসিকে। আর সশস্ত্র বাহিনীর মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হলে সেই সময় তারা তাদের ছক ও চাহিদা জানাবে।
জানা গেছে, আনসার মোতায়েন থাকবে ভোটের আগের পরে মোট ছয় দিন। আর পুলিশ মোতায়েন থাকবে পাঁচ দিন। অন্যান্য বাহিনীও একই সময়ের জন্য নিয়োজিত হতে পারে। তবে সশস্ত্র বাহিনীকে ভোটের দায়িত্ব দিলে আরও বেশি দিনের জন্য মোতায়েন করা হতে পারে।
সংসদ নির্বাচনের জন্য এবার সাড়ে সাত লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে আনসারের পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের দুই হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য, র্যাবসহ থাকবে এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন। অর্থাৎ সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
এদিকে আনসার জনপ্রতি ৬৩৭ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, কোস্টগার্ড ৬৩৭ টাকা থেকে এক হাজার ৮২০ টাকা, বিজিবি ৪শ টাকা থেকে এক হাজার ২২৫ টাকা এবং পুলিশ ৪শ টাকা থেকে এক হাজার ৬০৬ টাকা জনপ্রতি পাবে। এর সঙ্গে যোগ হবে খাবার ও ফুয়েলের মতো খরচ। ইতোমধ্যে বাহিনীগুলো মোট এক হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা চেয়েছে পুলিশ। এই বাহিনী চাহিদা দিয়েছে ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আনসার বাহিনী চেয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া বিজিবি ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ, র্যাব চেয়েছে ৫০ কোটি ৬৩ লাখ, কোস্টগার্ড ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা চেয়েছে। সংসদ নির্বাচনে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর এক লাখ ২০ হাজার সদস্যকে ১০ দিনের জন্য এবং অন্যান্য বাহিনীর সাত লাখের মতো সদস্যদের ছয় থেকে ১১ দিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তখন বিজিবি ও র্যাব ১১ দিনের জন্য মাঠে ছিল। সেই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকা। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় এবার সেই ব্যয় বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিভিন্ন বাহিনী একটি বরাদ্দ অ্যাডভান্স চেয়েছে। সবকিছু পর্যলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারের সংসদ নির্বাচনেও দুই হাজারের মতো বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হতে পারে। তাদের পেছনেও একটি মোটা অংকের টাকা ব্যয় হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।
এবার নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৪২ হাজার ১০৩টি। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে, যাদের নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।