এমপি সার্কেল, সংবাদ সংযোগ ডেক্স:
বিরোধী দলগুলোর আপত্তির মধ্যেই আজ বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তপশিল ঘোষণার জন্য বিকালে কমিশন সভা আহ্বান করা হয়েছে। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই তপশিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি)। এর আগে আজ সকাল ১০টায় তপশিল ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। নির্বাচনি আইন অনুসারে আজ সন্ধ্যায় তফশিল ঘোষণার পরপরই শুরু হচ্ছে ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’। নির্বাচন শেষে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত এই ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’ বহাল থাকবে।
তপশিল ঘোষণার দুই দিন আগে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-জাপাকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এই চিঠি দিয়েছিলেন। এই চিঠি তফশিল ঘোষণায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব। এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, অবশ্যই না। কোনো প্রভাব পড়বে না। ডোনাল্ড লুর চিঠি সংলাপের কি না—এই বিষয়ে কমিশন অবগত নন। কমিশনের কাছে কিছুই আসেনি। কমিশন তার নিজস্ব গতিতে সাংবিধানিক আলোকে যেভাবে রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে সেইভাবে কাজ করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাববুিল আউয়াল আগেই বলে রেখেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল হোক, প্রতিকূল হোক-নির্বাচন করতেই হবে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে নির্বাচন হবে না—এ ধরনের কোনো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং (ভুল ধারণা) জনগণের মধ্যে যেন না থাকে সে জন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের বিপরীতমুখী এমন অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হচ্ছে।
সংবিধানের ১২৩ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয়। সেই হিসেবে আগামী ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। অর্থাত্ গত ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনাও শুরু হয়ে গেছে।
তপশিল ঘোষণার শেষ প্রস্তুতি :ইসি সূত্রে জানা গেছে, তপশিল ঘোষণা সংক্রান্ত শেষ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সিইসির অফিস কক্ষে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে তপশিল ও ভোট কখন হবে—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতির উদ্দেশে সিইসি কী ধরনের ভাষণ দিবেন সেটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। সংসদের ভোটগ্রহণের জন্য আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারিকে প্রাধান্য দিচ্ছে কমিশন। আলোচনার এক পর্যায়ে ৬ জানুয়ারি ভোটের তারিখ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকাল ৫টায় কমিশন সভা করে সন্ধ্যা ৭টায় প্রথমবারের মতো সরাসরি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশনের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে চলে আসায় সময়সূচির কিছুটা পরিবর্তন আসতেও পারে। এক্ষেত্রে কমিশন সভা ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে হতে পারে। আর জাতির উদ্দেশে ভাষণ সন্ধ্যায় দিতে পারেন সিইসি। আজ সকাল ১০টায় সচিবের ব্রিফিংয়ের পর বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারকে নির্বাচন ভবনে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
নিরাপত্তা জোরদার, সকালে কথা বলবেন সচিব :এদিকে, তপশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কমিশন ভবনে এনআইডি সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত শুনানি গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনের তপশিল কখন ঘোষণা করা হবে, বুধবার সকাল ১০টায় তা জানাবেন ইসি সচিব। সেজন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারাই দেখবে। কমিশন ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন।
তপশিলের পর যে ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি :‘গণপ্রিতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২’ অনুসারে আজ সন্ধ্যায় তপশিল ঘোষণার পরপরই শুরু হচ্ছে ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’। নির্বাচন শেষে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত এই ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’ বহাল থাকবে। এ সময়ে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ কার্যকর হবে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের অবশ্যকর্তব্য। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো দায়িত্ব পালনে বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। এ সময়ে বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারে পরিণত হবে এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার বিধি ৩ অনুসারে এ সময়ে যে কোনো সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোন প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের কার্যক্রম ‘রুটিন ওয়ার্কে’ সীমিত হয়ে পড়বে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর ৪৪ (ঙ) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন বোধে যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির ব্যবস্থা নিতে পারবে। ‘নির্বাচন কমিশন এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ প্রয়োগ করতে পারবে।