এমপি সার্কেল, সুশাসন চক্র:
শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের নির্যাতনে জড়িত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর সাজা আবারও নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্টের বিধি ১ এর ৪, ৫, ৭ ধারা এবং বিধি ২-এর ৮ ধারা অনুযায়ী ভিসিকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৬ জুলাই) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে গত ১৯ জুলাই শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের নির্যাতনে জড়িত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে কোন প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে, তা জনতে চান হাইকোর্ট। রিটকারীর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
ওই দিন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, ভিসি প্রথম শাস্তি হিসেবে ৫০০ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের জন্য বহিষ্কার করবেন। এরপর ভিসি যদি মনে করেন শাস্তি অপরাধের তুলনায় কম হয়েছে তাহলে তিনি এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠাবেন। কিন্তু ভিসি নিজে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠিয়ে কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। এতে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
ফুলপরীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি বলে জানিয়েছেন প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাকে নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয় নির্যাতনকারীদের।