এমপি সার্কেল, অনুসন্ধান ও কেস স্টাডি ডেক্স:
পাবনার চাটমোহরে সেলাই ও হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের ঋণ দিয়ে গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলাসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ নামে এক ভুয়া এনজিও’র বিরুদ্ধে। এতে প্রায় ৩ শতাধিক গ্রাহকের মাথায় হাত।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল ২০২৩) সকালে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের উথূলী গ্রামের ওই ভুয়া প্রতিষ্ঠানে এসে তালাবদ্ধ দেখে শতাধিক নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করে। পরে ওই বাড়ির মালিকের ওপর চড়াও হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাসখানেক আগে উথূলী গ্রামের নিত্যানন্দ মৌয়ালীর বাড়ি ভাড়া নেয় ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও’র লোকজন। বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় এনজিও’র কর্তা ব্যক্তিদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে কয়েকদিন পর দেয়ার কথা বলা হয় বাড়ির মালিককে। পরে ওই এনজিও’র ম্যানেজারসহ কয়েকজন মাঠকর্মী পৌরসভাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন থেকে সদস্য সংগ্রহ করা শুরু করে। সেইসঙ্গে সদস্য ফি বাবদ ২৫০ টাকা করে নগদ টাকা নেয়া হয়। সমিতির সভাপতিকে দিয়ে নিজেদের নামে মোবাইলের সিম কার্ড তুলে নেন ওই এনজিও’র লোকজন। ওই সিমকার্ড দিয়ে প্রত্যেক গ্রাহকের সঙ্গে এনজিও’র মাঠকর্মীরা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
এরপর সদস্যদের চাহিদামতো ১ লাখ টাকা করে ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রায় ৩ শতাধিক সদস্যের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা ঋণ নেয়া বাবদ জমা নেয়া হয়। এদিকে প্রত্যেক সদস্যকে ২১ এপ্রিল (শুক্রবার) ঋণ দেয়ার কথা বলে অফিসে আসতে বলা হয়। গতকাল সকালে অফিস তালাবদ্ধ দেখে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বিক্ষোভ করতে থাকেন প্রতারণার শিকার শতাধিক-নারী পুরুষ। পরে ক্ষুব্ধ লোকজন বাড়ির মালিকের ওপর চড়াও হলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ পৌঁছানোর পর ওই ভুয়া এনজিও’র অফিস রুমে প্রবেশ করে গ্রাহকদের পরিচয়পত্র ও ছবি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। বাড়ির বাইরে দেয়ালে ছোট্ট একটা ব্যানার লাগানো আছে।
প্রতারণার শিকার আটংলংকা গ্রামের মুসলিমা খাতুন, শীলা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঈদের আগে ধার করে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম ঋণের আশায়। ভেবেছিলাম গরু কিনবো। পরিশ্রম করে আস্তে আস্তে পরিশোধ করবো টাকা। কিন্তু মিষ্টি কথায় এমন সর্বনাশ হবে ভাবতেও পারিনি। এখন ধারের টাকা শোধ করবো কীভাবে? হরিপুর গ্রামের হাফিজুল ইসলাম নামে অপর আরেকজন ভুক্তভোগী জানান, ঈদের আগে আমাদের মতো গরিব মানুষদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করে আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রতারকদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।