এমপি সার্কেল, সংবাদ সংযোগ ডেক্সঃ
আজ ১০ নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকায় বুকে পিঠে গণতন্ত্র মুক্তির স্লোগান লিখে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে যুবলীগ নেতা নূর হোসেনকে। তার এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
১৯৮৭ সালে ক্ষমতায় ছিলেন স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। তার পতনের দাবি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তখন উত্তাল পুরো দেশ। রাজপথে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র জনতার বিক্ষোভ রুপ নেয় গণআন্দোলনে। ১০ নভেম্বর সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচিতে হাজারো প্রতিবাদী যুবক জীবন্ত পোস্টার হয়ে নেমে আসেন রাজপথে। তাদেরই একজন ২৬ বছরের তরুণ যুবলীগকর্মী নূর হোসেন।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ১৫ দল, ৭ দল ও ৫ দলের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থনে অবস্থান ধর্মঘট ঘেরাও কর্মসূচিতে রূপ নেয়। স্বৈরশাসকের সব বাধা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই সচিবালয়ের চারদিকে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মিছিল সমবেত হয়।
তখন তোপখানা রোডের মুখে পুলিশ বক্স পেরিয়ে শুরু হয় নূর হোসেনদের সাহসী মিছিল। তার খালি গায়ে বুকে এবং পিঠে লিখা ছিল, ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক-স্বৈরাচার নিপাত যাক’। সমাবেশ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ। পল্টন তখন রণক্ষেত্র। এরই মধ্যে খবর আসে পুলিশের গুলিবর্ষণে শহীদ হয়েছেন নূর হোসেন। আহত হয়েছেন অনেকে।
নূর হোসেনের আত্মদানের মাধ্যমে সেদিন গণতন্ত্রের নতুন সংগ্রাম শুরু হয়। সেই সংগ্রামের ধারায় ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী শাসক পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন গণতন্ত্র। শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
প্রতিবছর দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় রাজধানীর গুলিস্থানের শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে।