এম.পি.সার্কেল, অনুসন্ধান ও কেস স্টাডি ডেক্স:
পবিত্র ঈদুল আযহা সংশ্লিষ্ট পশুর হাটকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠছে জাল টাকা চক্রের সদস্যরা। অফলাইন-অনলাইন দুইভাবেই এই চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের টার্গট হচ্ছে পশু ব্যবসায়ী এবং পশুর হাটবাজার। ইতোমধ্যে জাল টাকা চক্রের অপরাধী যারা বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি ছিল তারা জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, জাল চক্র যাতে কোরবানির পশুর হাটে কোনোভাবে সক্রিয় না হতে পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ সতর্ক রয়েছেন।
তারা আরও জানায়, রোজার ঈদের আগে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রির একাধিক চক্রের সদস্যদের ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ওই সময় বেশ কিছু চক্র ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তারা বলছেন, ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা চক্রের সদস্যরা কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, জাল টাকার সঙ্গে যুক্ত চক্রের বেশ কিছু সদস্য কারাগার থেকে বের হয়ে আবারো একই কাজে সক্রিয় হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে তারা পশুর হাটে জাল টাকা ছড়িয়ে মানুষকে সর্বশান্ত করতে পারেন। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট এবং গোয়েন্দারা এই সকল চক্রদের নজরদারিতে রেখেছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জাল টাকা চক্রের সদস্যদের ধরতে অতিরিক্ত গোয়েন্দা নজরদারি ও সোর্স বৃদ্ধি করা হয়েছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি এ চক্রের সদস্যরা আগের থেকে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা জাল টাকা বিক্রি করার জন্য সামাজিক প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। গোয়েন্দারা বলছেন, টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সবাই সচেতন না হলে এ চক্রের দ্বারা সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
ডিবি সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা মার্কেটে ছড়িয়ে দেওয়ার টার্গেট করে ৫ থেকে ৬ মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়ে কাজ করে জাল মুদ্রার কারবারি চক্র। তাদের উদ্দেশ্য বিপুল পরিমাণে জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে পশুর হাটে ছড়িয়ে দেওয়া। সম্প্রতি এরকম একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিবি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণা ও জাল টাকার তৈরি ও ব্যবসার অভিযোগে অতীতেও কয়েকবার কারাগারে গেছেন। কারাগার থেকে বের হয়ে তারা আবারও একই কাজে লিপ্ত হন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে জাল টাকা চক্রের সদস্যরা। তবে এসব চক্রের সদস্যরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। তারপরও জেল থেকে বের হয়ে এরা ঘাপটি মেরে বসে থাকে। প্রতিবার ঈদের সময় বিশেষ করে কোরবানির ঈদে পশুর হাটকে টার্গেট করে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে। ঈদকে সামনে রেখে জালনোট কারবারিরা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেয় বা দিচ্ছে এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর আমরা এসব চক্রের মূলহোতাদের নজরে রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গরুর হাটে আমাদের বিশেষ টিম কাজ করছে। সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সর্তক রয়েছি।
অনলাইনেও জাল টাকা চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, আমরা অনলাইনে কয়েকটি পেজকে শনাক্ত করেছি। অপরাধীরা ফেসবুক পেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর বিদেশে বসে চালান এজন্য আপাতত তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ অনুষদের শিক্ষক, বিশিষ্ট অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, জাল টাকা চক্রের সদস্যরা বিশেষ করে পশুর হাটকে টার্গেট করে কাজ করে থাকেন। এরা কোরেবানির ঈদে এসব টাকা দিয়ে বিভিন্ন লেনদেন করে গরিব মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরা একটি সংঘবদ্ধচক্র। এরা জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস হচ্ছে।
তিনি বলেন, এদের ধরতে বিশেষ করে পশুর হাটে অতিরিক্ত গোয়েন্দা নজরদারি রাখলেই এ চক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারে। তাছাড়া পশুর হাটে বা বিভিন্ন কেনাকাটায় লেনদেন করার সময় সবাইকে সচেতন হতে হবে, তাহলেই অর্থনৈতিক ভাবে এসব ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষ অনেকটা নিরাপদ থাকবে।