এমপি সার্কেল, অনুসন্ধান ও কেস স্ট্যাডি ডেক্স:
পুরাতন রুট বদলে ভিন্ন ভিন্ন পথে ঢাকায় আসছে ইয়াবার চালান। মিয়ানমার থেকে আসা এ মাদক মূলত কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে কক্সবাজার থেকে আসা যানবাহনগুলোর ওপর নজর রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেশ কিছুদিন ধরে তাই খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি হয়ে রাজধানীতে আসছে ইয়াবা। এ কাজে অধিকাংশ সময় ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের। সর্বশেষ ১৬ জানুয়ারি এমন দু’জনকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
ডিএনসি মিরপুর সার্কেলের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঞা গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীর সায়েদাবাদে গ্রেপ্তার লামং চাকমা ও জামবি চাকমার কাছে চার হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে। তারা মূলত বাহক হিসেবে কাজ করতেন। একেকটি চালান পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। যেমন জামবি এই চালানের জন্য ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডিএনসি সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে থাকেন লামং ও জামবি। অর্থকষ্টে থাকা এমন মানুষকেই টার্গেট করে মাদক কারবারিরা। তাদের বলা হয়, কেউ কিছু বুঝতে পারবে না। তাদের কেউ সন্দেহও করবে না। পারিশ্রমিক হিসেবে মিলবে মোটা অঙ্কের টাকা। তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে ওই দু’জন ইয়াবার চালান নিয়ে প্রথমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় যান। পরে সেখান থেকে শান্তি পরিবহনের একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সায়েদাবাদে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অবস্থান নেয় ডিএনসির একটি দল। একপর্যায়ে বাসটি থামিয়ে দুই যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা হয়। তখন লামংয়ের কাছে ২ হাজার ৮০০ এবং জামবির কাছে ১ হাজার ২০০টি ইয়াবা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরখানেক ধরে ভিন্ন রুট ব্যবহার করে ইয়াবার চালান ঢাকায় আনার ঘটনা বেশি জানা যাচ্ছে। টেকনাফ থেকে ইয়াবা প্রথমে যাচ্ছে বান্দরবান, রাঙামাটি বা খাগড়াছড়ি। পরে সেখান থেকে আনা হচ্ছে ঢাকায়। আর এখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কখনও চাঁদপুর ঘুরেও চালান ঢাকায় আসছে। এর মূল উদ্দেশ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ফাঁকি দেওয়া।
এর আগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ভোরে রামপুরায় রাঙামাটি থেকে আসা রিলাক্স ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের একটি বাস থেকে সুমন চাকমা ও কিউমেচিং চাকমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৬০০টি ইয়াবা। একই বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে সায়েদাবাদে খাগড়াছড়ি থেকে আসা শান্তি পরিবহনের একটি বাসে অভিযান চালানো হয়। সেখানে যাত্রীবেশে থাকা রূপন চাকমা, রূপায়ণ তনচংগ্যা ওরফে বাবুল ও গান্দিমালা তঞ্চঙ্গ্যাকে ৭ হাজার ৩০০টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ আগস্ট গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে মংয়েছা চাকমা ও তাঁর শাশুড়ি চাইন ছিং চাকমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় মোট ৭ হাজার ২০০ ইয়াবা। তাদের মধ্যে মংয়েছার বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আর চাইনের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়।
এর আগে ১২ জুলাই ঢাকার গাবতলী থেকে ১১ হাজার ইয়াবাসহ সাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি রাঙামাটি। তিনি টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে প্রথমে নিজের বাড়িতে রাখেন। পরে সেখান থেকে আসেন ঢাকায়। পরদিন ফাতেমা ও মমিনা বেগমকে চার হাজার ইয়াবাসহ ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। তাদের বাড়ি টেকনাফ। তবে নজরদারি এড়াতে তারা টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে প্রথমে চাঁদপুর যান। সেখান থেকে লঞ্চে ঢাকায় এসেছিলেন।