এমপি সার্কেল, সংসদ-মন্ত্রীসভা এবং সুশাসন ডেক্স:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ, ২৭ শতাংশ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র এবার বাতিল হলো। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসংক্রান্ত জটিলতা এবং ঋণ-বিলখেলাপি ও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান ছয় জন সংসদ সদস্য (এমপি) রয়েছেন। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাঁচ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ২ হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর মধ্যে বর্তমানে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৮৫ জন।
আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে আপিল গ্রহণ কার্যক্রম। আপিল জমার জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচন ভবনে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। ১০ জন কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে পারবেন মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, তারা ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। ১০ ডিসেম্বর থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়ে চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ইসি সূত্র জানায়, আপিল আবেদনগুলো শুনানি শেষে আপিলের ফলাফল মনিটরে প্রদর্শন, রায়ের পিডিএফ কপি ও আপিলের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের ইমেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো এবং নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া আপিলের রায়ের অনুলিপি নির্দিষ্ট শিডিউল মোতাবেক নির্বাচন ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালাম বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে) নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র ১ সেট ও ছায়ালিপি ৬ সেটসহ) আপিল দায়ের করতে পারবেন।
বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাঁচ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মানিকগঞ্জের তিনটি আসনেই জাতীয় পার্টির (জাপা) তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়েছে। আওয়ামী লীগের ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন, নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ, কক্সবাজার-১ আসনের সালাহউদ্দিন আহমদ, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের নাসিরুল ইসলাম খান এবং বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদ। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ছয় জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তারা হলেন ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন, নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ, নোয়াখালী-৪ আসন থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে একই দলের যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম।
ঢাকার ২০টি আসনে ১৫৬টি বৈধ, বাতিল ৭৮টি মনোনয়নপত্র: ঢাকা মহানগরের ১৫টি এবং মহানগরের ৫টিসহ ২০টি সংসদীয় আসনে বর্তমানে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ১৫৬ জন। বাতিল হয়েছে ৭৮ জনের মনোনয়নপত্র। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনে ১৮৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে ১২৪ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। আর ৬৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরের বাইরের ৫টি আসনে ৪৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ৩২টি বৈধ হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ১৪টি মনোনয়নপত্র।
আরও ছয় জনকে শোকজ: এদিকে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের শোকজ অব্যাহত রয়েছে। আরও ছয় জন প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ জনের মতো প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছিল। তার মধ্যে অনেকেই শোকজের জবাব দিয়েছেন। তবে কমিশন কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের নজির পাওয়া যায়নি।
প্রার্থীদের হলফনামা টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে :বেশ কয়েক জন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বৈধ প্রার্থীদের হলফনামা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। রিটার্নিং কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত বোর্ডে প্রার্থীদের হলফনামা টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উন্মুক্ত হলফনামায় কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সংক্ষুব্ধরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। তবে সব রিটার্নিং অফিসার হলফনামা উন্মুক্ত করছেন না বলে অভিযোগও আছে।
উল্লেখ্য, এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৮টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ইসি ঘোষিত তপসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি।