এমপি সার্কেল, পেশাজীবী ও প্রতিষ্ঠান ডেক্স:
সোনিয়া শবনম সহজে বাড়ি থেকে বের হননা৷ না, কোন হুমকিধামকি নয়৷ রাজধানীর দূষিত পরিবেশ আর ট্রাফিক জ্যাম তাঁর কাছে অসহ্য লাগে৷ তাই, দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় কম্পিউটারে বসেই কাটিয়ে দেন তিনি৷
ভেবে বসবেন না, সোনিয়া বোধহয় এক বেকার তরুণী৷ ইন্টারনেটে চ্যাট করে সময় কাটে তাঁর৷ বিষয়টি মোটেই সেরকম নয়৷ তিনি একজন মুক্ত পেশাজীবী৷ ইন্টারনেটে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েব ডিজাইনের কাজ করেন সোনিয়া৷
ইন্টারনেটে কাজ
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ইন্টারনেটে কাজ করার এমন প্রবণতা বেড়েছে৷ অবস্থা এমন যে, বাংলাদেশ এখন এই কাজে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, এমনকি কল সেন্টারের কাজ – সবই ঘরে বসে করছে তরুণরা৷ প্রয়োজন শুধু একটা ভালোমানের কম্পিউটার, সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ৷ তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা সামহোয়্যার ইন এর কর্মকর্তা আরিল ক্লোকেরহেল্গ এ প্রসঙ্গে জানান, এটা নির্ভর করে আমাদের স্কিলের ওপরে৷ আমি আগে থেকেই দেখেছি, অনেক প্রোগ্রামার অনলাইনে কাজ করে আয় করে৷ এখানে বুঝতে হবে, ক্লাইন্ট কি ধরণের কাজ অচেনা মানুষের কাছ থেকে নিতে পারে৷
মুক্ত পেশাজীবী
ইন্টারনেটে মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে কাজ করাটা অনেকটাই ধৈর্যের ব্যাপার৷ দিনের পর দিন আপনাকে কাজের খোঁজে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ কেননা, সেখানে এক একটা কাজের জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই ভিড় জমান মুক্ত পেশাজীবীরা৷ ফলে, সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতার পর কাজটি শেষমেষ হাতে পেতে খানিকটা সময় লেগেই যায়৷ তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এই কাজ পাওয়ার সুযোগ বেশি বলেই মত আরিলের৷ তিনি বলেন, ডাল, ভাত, গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়া এসব মিলিয়ে বাংলাদেশে খরচ বেশি লাগেনা৷ অন্যদিকে, ইংল্যান্ড বা জার্মানিতে এসবের খরচ অনেক বেশি৷ ফলে বাংলাদেশিরা একটু কম দামের কাজ চাইতে পারে৷ এতে করে ক্লায়েন্ট খুশি হয়৷
কয়েকটি ঠিকানা
বাংলাদেশের মুক্ত পেশাজীবীদের আনাগোনা দেখা যায় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে৷ ওডেক্স ডট কম এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে৷ এই সাইটে টিম আকারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে৷ রয়েছে ফ্রিলান্সার ডট কম৷ তবে এখান থেকে কাজ পেতে গেলে কমিশন দিতে হবে ১০ শতাংশ হারে৷ ফ্ল্যাশ ডেভেলপারদের জন্য একটি চমৎকার সাইট মচিমিডিয়া ডট কম৷ ছোট ছোট কম্পিউটার গেম তৈরি করে তা বিক্রি করা যাবে এই সাইটের মাধ্যমে৷ এছাড়া ভিওয়ার্কার ডট কম সাইটেও মুক্ত পেশাজীবীদের আনাগোনা দেখা যায়৷
এখনো কি সন্দিহান?
এখনও কি সন্দিহান আপনি? ইন্টারনেটে আদৌ এভাবে কাজ করা যায় নাকি? চলুন ঠিক এই প্রশ্নটাই করি আরিলকে৷ তিনি বলেন, এটা সত্যি, অন্য দেশের চেয়ে আমাদের আয়ের চাহিদা কম৷ আমরা যদি ক্লায়েন্টের প্রত্যাশা আর কোয়ালিটি ঠিক রাখতে পারি, তাহলে অবশ্যই অনলাইনে আয় সম্ভব৷
রোজগার কম হয়না
ইন্টারনেটে কাজ করে রোজগারও কিন্তু কম হয় না৷ নবীনদের শুরুতে কাজের জন্য কষ্ট করতে হলেও একসময় তা পাওয়াই যায়৷ তবে ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ ঠিকঠাক কাজ পাওয়া গেলে বাংলাদেশে বসেই ঘন্টা প্রতি ২ থেকে ১০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের৷ আবার কাজের সময়ে বেশ তারতম্য রয়েছে৷ বাংলাদেশ সময় রাতের বেলা অনেক মুক্ত পেশাজীবী কাজ করেন৷ দিনটা তাঁদের কাটে নেহাত ঘুমিয়ে৷
মুক্ত পেশাজীবী হতে খুবই উচ্চ শিক্ষিত না হলেও চলবে বলে৷ সফটওয়্যার সংগঠন বেসিস এর সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমানের মত এমনটাই৷ তবে আগ্রহীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কোন কাজে দক্ষ হতে হবে৷ প্রয়োজনে নিতে হবে প্রশিক্ষণ৷ মোটের ওপর বিদেশি ভাষায় দক্ষতাও কাজ পেতে সহায়ক৷ সুতরাং আর দেরি কেন? নেমে পড়ুন এক্ষুনি৷