এমপি সার্কেল, সুনাগরিক চক্র ডেক্স:
বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফরকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব ও মুখপাত্র ড. মো. শাহজাহান এ ঘোষণা দেন। দলটির মুখপাত্র এ সময় জানান, বিএনমের যিনি চেয়ারম্যান হচ্ছেন, তিনি আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত মুখ।
এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে সবার জানার আগ্রহ তাহলে বিএনএমের চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন? এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিস্তর আলোচনা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর, মো. আব্দুল ওহাব, দেওয়ান শামসুল আবেদিন, অধ্যাপক আব্দুর রহমানের উপস্থিতি দেখে আলোচনা ভিন্ন মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নতুন নিবন্ধিত দলটির মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমাদের সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছেন। ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওহাব, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামসুল আবেদিন এবং বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রহমান যুক্ত হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও অনেক চমক আসবে।’
এদিকে, দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন। তাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করায় দলটির মধ্যে বিতর্ক চলছে। সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে রাতের আধাঁরে কেন্দ্রীয় কমিটির ৭/৮জনকে নিয়ে কাউন্সিল করা হয়েছে। সেখানেও চারজন ওয়াকআউট করেছেন। অথচ এর মাধ্যমেই গঠন করা হয়েছে নতুন কমিটি। এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। গুঞ্জন রয়েছে- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ যে কোনো সময়ে এই দলের নেতৃত্বে আসবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনএম’র মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়ছে। এরমধ্যে ১৬ জন স্থায়ী সদস্য রয়েছেন। এখনো বেশ কয়েকটি বড় বড় পদ খালি রয়েছে।’
দলীয় চেয়ারম্যানের নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই চেয়ারম্যানের নাম প্রকাশ করা হবে। যিনি চেয়ারম্যান হচ্ছে, তিনি দেশ ও আর্ন্তজাতিক মহলে বেশ পরিচিত মুখ। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দলের মুখপাত্র ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘অনেকই বিএনএমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নাম বলছেন। গণমাধ্যমও আসছে। আমরা এই বিষয়ে এখনো কোনো কথা বলছি না। কে চেয়ারম্যান হচ্ছেন তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।’
সংলাপ ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সংলাপ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচনে যাচ্ছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করি।’
আরেক প্রশ্নের উত্তর বিএনএম মহাসচিব বলেন, ‘অনেকে আমাদেরকে ‘‘কিংস পাটি’’ বলে, যা সত্য নয়। আমরা ২০১৯ সাল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই অনুসারে কমিটি ও দলকে সংগঠিত করেছি। নিয়ম মেনেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছি।’
রাজধানীর মহাখালী এলাকার আমতলী এলাকায় বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়কে মোল্লা ভবনের চার তলায় বিএনএম দলটির প্রধান কার্যালয় এখন গুলশানে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংবাদ সম্মেলনে বিএনএমের মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘কোনো জোটের সঙ্গে নয় বরং নিজস্বভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনএম।’
বিএনএম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দৃঢতার সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সততা, ন্যায়নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, দেশপ্রেমকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সোমবার থেকেই আমাদের দলের গুলশানের নতুন কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিতরণ হয়েছে। দলের সহসভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন ফরম কেনার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে। আশা করছি ৩০০ আসনের মনোনয়ন যাচাই-বাচাই করে এর থেকে সৎ এবং যোগ্যদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলের মহাসচিব হিসেবে আমি আপনাদেরকে অন্তত এতটুকু আশ্বস্ত করতে পারি এই দলে অনেক চৌকস রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলন হয়েছে। সামনে আরও হবে। নিকট ভবিষ্যতে আরও অনেক সাবেক এমপি, রাজনীতিবিদ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতিসম্পন্ন আরও বহু বরেণ্য ও খ্যাতিমান লোকদের আবির্ভাব আমাদের দলে ঘটবে।’
বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া শাহ মো. আবু জাফর বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক শ্রমিক নেতা ছিলেন। ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-১ আসন (মধুখালী, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবু জাফর এর আগে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং লাঙ্গল প্রতীক নিয়েও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।