এমপি সার্কেল, সুচিকিৎসা চক্র ডেক্স:
ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ভাবিয়ে তুলছে। এমন অবস্থায় ভারতের অন্যতম টিকা উৎপাদনকারী বায়োটেক প্রতিষ্ঠানটি ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। চিকুনগুনিয়ার টিকা তৃতীয় ট্রায়াল শেষে অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে।
ভারত বায়োটেক জানায়, প্রতিষ্ঠানের কো-ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কৃষ্ণা এলা ভ্যাকসিন গবেষণায় বিপ্লব এনেছেন। বিশেষ করে করোনার কঠিন সময়ে অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার মতো ভ্যাকসিনের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে কোভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দেয় ভারত বায়োটেক। যা পুরো ভারতে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
প্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা যায়, করোনার সময় পুরোদমে করোনার টিকা তৈরিতে এগিয়ে ছিল। করোনা যখন একটু কমতে শুরু করে তখন নতুন করে ডেঙ্গু গবেষণা শুরু করা হয়। এক সময় হাতে ইনজেকশন পুশ করার ভয়ে করোনার টিকা নেওয়া থেকে সরে যান অনেকে। ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষ ভাবতে থাকে কিভাবে এটা দূর করা যায়। পরে ইন্ট্রানাসাল টিকা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় সংস্থাটি। ২০২২ সালে যেটা ব্যবহারের অনুমোদন মেলে। নাকে ড্রপের মাধ্যমে টিকা কার্যকর হওয়ায় সহজ হয় কোভিড মোকাবিলা।
শিশুদের ডায়রিয়া রোধে রোটা ভাইরাসের টিকার ডোজ কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে জানানো হয়, প্রথমে রোটা ভাইরাসের টিকা ছোট শিশুদের মুখে আড়াই এমএল পরিমাণ দিলে তারা মুখ থেকে বের করে দিত। আর একবার বের করে দিলে ওই শিশুকে আর মুখে খাওয়ানোর এ টিকা দেওয়া যেত না।
ভারত বায়োটেক এটা নিয়ে কাজ শুরু করে, যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবি’র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. ফিরদৌসী কাদরী। তারা রোটাভ্যাকের ডোজ আড়াই মিলি থেকে হাফ মিলিতে (.৫০) নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। এতে যেমন পরিবহণ খরচ, উৎপাদন খরচ সবই কমে তেমন শিশুদের ওপর কার্যকারিতা বেড়ে যায় মুখ থেকে বেরিয়ে না আসার কারণে।
এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে কিভাবে বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায় তা নিয়ে কাজ করছে ভারত বায়োটেক। শুধু তাই নয়, কিভাবে স্বল্প রিসোর্স ব্যবহার করে টিকা সাশ্রয়ী করা যায় সে চেষ্টাও সবসময় থাকে, জানিয়েছেন বায়োটেক কর্মকর্তারা। এছাড়া ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো রোগের টিকা নিয়েও কাজ করছে ভারত বায়োটেক। পশুর লাম্পি ডিসিজ, যা পক্সের মতো ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল ভারতে। গত কোরবানির ঈদের আগে বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে ছড়ায় রোগটি। কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয় এ রোগে। সেই লাম্পি ভাইরাসের টিকাও প্রায় অনুমোদন পর্যায়ে এবং টিবি ভ্যাকসিনেরও ট্রায়াল চালাচ্ছে ভারত বায়োটেক। জিকা ভাইরাস নিয়ে গবেষণাও শেষ পর্যায়ে, জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষ জানায়, মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখি ও গাছের বিভিন্ন রোগের টিকা নিয়েও কাজ করছে তারা। ভারত কিভাবে সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে তার উদাহরণ হতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে তুলনামূলক কম মূল্যে টিকা দিচ্ছে তারা। ১৯৯৬ সালে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের জেনম ভ্যালিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত বায়োটেক। আলু, পেঁয়াজসহ এমন যে কোনো খাদ্যপণ্যে যদি কোনো রোগ বিপর্যয় নিয়ে আসে তাহলে সেটা রোধে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ভারত বায়োটেক কাজ করছে বলেও জানানো হয়। করোনার মতো খাদ্যপণ্যের কোনো রোগ সামলাতে যেন কষ্ট কম হয় সেজন্যই এ উদ্যোগ।