এমপি সার্কেল, উদ্যোক্তা ও বন্ধু চক্র:
তারল্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমানতের সুদেরহার বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাড়তি আমানত সংগ্রহ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আমানতের সুদহার বাড়াতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে আমানত প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখন মূল্যস্ফীতির হারের নিচেই রয়ে গেছে আমানতের সুদহার। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখলে তা সুদসহ না বেড়ে বরং টাকা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুলাই থেকে সুদেরহার সীমিত আকারে বাজারভিত্তিক করেছে। ফলে ঋণের সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নিয়ে এখন বাড়তি হারে নতুন সীমা আরোপ করেছে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ঋণের সুদহার বাড়াতে পারছে, তেমনি আমানতের সুদের হারও বাড়াতে পারছে।
ব্যাংকগুলোর এখন আমানতের সুদের হার বাড়াতে কোনো বাধা নেই। তবে ঋণের সুদহার বাড়ানোর সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ঋণ ও আমানতের সুদের হারের মধ্যকার ব্যবধান সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। ফলে ঋণের সুদ হারের চেয়ে আমানতের সুদের হার ২ থেকে ৪ শতাংশ কম থাকবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে গড়ে ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান রয়েছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে আমানতের গড় সুদ ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ঋণের সুদ ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছরের জুনে ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ওই সময়ের ব্যবধানে সুদহার বেড়েছে দশমিক ৫৫ শতাংশ।
তবে ব্যাংকগুলো গড়ে আমানতের সুদহার আরও বেশি বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার বাড়িয়ে ৫ থেকে ৮ শতাংশ করেছে। একই সঙ্গে আকর্ষণীয় মুনাফার সঞ্চয় প্রকল্পগুলোও চালু করতে শুরু করেছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পৌনে ৯ শতাংশে নিয়ে গেছে। এসব ব্যাংক আকর্ষণীয় মুনাফার সঞ্চয় প্রকল্পগুলোও চালু করেছে। এর মধ্যে ৭ বছরে দ্বিগুণ আমানতসহ নানা প্রকল্প রয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমানতের সুদহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে তারা ৬ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করে আমানতের সুদ নির্ধারণ করতে পারবে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার এখন ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ যোগ করলে সুদহার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ এ হিসাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতের বিপরীতে সুদ দিতে পারবে।
এদিকে সেপ্টেম্বরে ১২ মাসের গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার এখনও এর নিচে রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি হলেও মুনাফা থেকে কর ও সার্ভিস চার্জ কেটে নেওয়ার ফলে প্রকৃত সুদ আয় এখনও মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। যে কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখলে এখনও টাকা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্য সংকট আরও প্রকট হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের তারল্য সহায়তা নিতে হচ্ছে। এর মধ্যে এক দিনেই নিয়েছে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মাঝেমধ্যেই ১২ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা ধার নিচ্ছে।