এমপি সার্কেল, অনুসন্ধান ও কেস স্টাডি ডেক্স:
করোনা মহামারী মোকাবিলায় কেনা বিপুল পরিমাণ চিকিৎসাসামগ্রী এখনো কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) মজুদ পড়ে রয়েছে। গত দুই বছরের বেশি সময়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার সুরক্ষাসামগ্রী কিনেছে সরকার। তবে এখনো পড়ে আছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার সামগ্রী। এগুলো শেষ করতে সারাদেশের সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি সিএমএসডি। এমন প্রেক্ষাপটে এসব জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের বড় অংশ কার্যকারিতা হারানোর পর্যায়ে পৌঁছেছে। তারপরও এগুলো হাসপাতালের নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহারে আশাবাদী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সিএমএসডির তথ্যমতে, বর্তমানে তাদের কাছে ১৭টি সরঞ্জাম মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) রয়েছে ৭ লাখ ৬ হাজার ৮২৯টি, কেএন-৯৫ মাস্ক প্রায় ছয় লাখ, এফএফপি২ মাস্ক সাড়ে ১১ লাখের বেশি, তিন মিটার বিশিষ্ট মাস্ক এক লাখ ১৮ হাজারের বেশি, সার্জিক্যাল মাস্ক পৌনে দুই লাখ, ভেনচুরি মাস্ক প্রায় দুই লাখ, অক্সিজেন মাস্ক ১ হাজার ৮০০টি, হ্যান্ডস্যানিটাইজার (১০০ মিলি লিটার) দুই লাখ ৬১ হাজার, হ্যান্ডস্যানিটাইজার (২৫০ মিলি লিটার) দুই লাখ ১০ হাজার। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্লাভস, গ্যাস অ্যানালাইজার, ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর এবং সিলিন্ডারও মজুদ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘উপকরণগুলো হাসপাতালের নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করা হবে।’
জানা গেছে, এসব উপকরণ নিয়ে করণীয় জানতে চেয়ে এ বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সিএমএসডি। তারা জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যেকোনো উপায়ে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ১ মার্চ সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করতে চিঠি দেয় সিএমএসডি। আমাদের সময়ের হাতে সেই চিঠি পৌঁছেছে।
চিঠিতে, প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার উপযোগী আইটেমগুলোর চাহিদা জানিয়ে উপযোগী প্রতিনিধি পাঠিয়ে সিএমডিসি থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মালামাল গ্রহণে সিভিল সার্জনের প্রতিস্বাক্ষর প্রয়োজন বলেও জানানো হয়।
ওই চিঠি পাঠানোর তিন মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতালই একটি উপকরণও নেয়নি। অধিকাংশ হাসপাতালে আগে থেকেই এসব উপকরণ পর্যাপ্ত রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কেউই আর এগুলোতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
চিঠি পাওয়ার কথা জানান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম ডা. শামীম আহম্মদ। তিনি বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি, কিন্তু আনা হয়নি। কারণ আগে পাওয়া এসব উপকরণের কিছু এখনো মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন পড়লে আনা হবে।’ আর চিঠি পেয়েছেন কিনা তা মনে করতে পারলেন না গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ। তিনিও জানালেন, ‘এসব উপকরণের এখন প্রয়োজন নেই।’
এমন প্রেক্ষাপটে উপকরণগুলোর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সিএমএসডির উপপরিচালক ডা. কে. এম. হুমায়ন কবীর। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়কে আগেই জানানো হয়েছে। তবে এখনো স্পষ্ট কিছু তারা নির্দেশনা দেয়নি।’
মজুদ থাকা এসব সরঞ্জামের দামের তথ্য দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। তবে সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া ন্যূনতম দর হিসাব করলেও এগুলোর দাম দাঁড়ায় ১৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা। তবে বাস্তবে এই দামের চেয়ে অন্তত পাঁচ শতাংশ বেশিতে সরকার কিনেছে বলে ধারণা তাদের। তবে মজুদ থাকা সব উপকরণই সরকারের কেনা নয়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও),
জার্মানি, ভারত এবং ইউনিসেফের উপহার দেওয়া সামগ্রীও রয়েছে। মজুদের পরিমাণ অনুযায়ী যার দাম ২৪ কোটি ৬৭ লাখ ৭ হাজার ৭৮০ টাকা। বাকি ১৩৫ কোটির বেশি গেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
সিএমএসডির পরিচালক মো. তোফায়েল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসব উপকরণ পোস্ট অপারেটিভ ও আইসিইউয়ের রোগী থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের কাজে লাগে। কিন্তু না নিলে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। মন্ত্রণালয় থেকেও কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘মজুদ থাকা এসব উপকরণ নিতে হাসপাতালে জানানো হয়েছে। কিন্তু ট্রান্সপোর্টসহ নানা কারণে তারা নেয়নি। তা ছাড়া কোভিড পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় সেটাও একটা বড় প্রভাব ফেলছে। তারপরও আমরা কিভাবে এগুলোর সৎ ব্যবহার করা যায় সেই চেষ্টা করছি।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এগুলোর ব্যবহার ও পরিকল্পনা না থাকলে কিনেছে কেন? বিভিন্ন হাসপাতালে দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী এসব সরঞ্জাম কিনেছে সিএমএসডি। তারা অধিদপ্তরের অধীনে কাজ করে। এসব কিছু নিয়ে তাদের পরিকল্পনা থাকা উচিত।’
আজাদুল আদনান
দৈনিক আমাদের সময়