এম.পি. সার্কেল, উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা ডেক্স:
দেশে সংগৃহীত পশুর চামড়ার বেশিরভাগই আসে ঈদুল আযহার সময়। প্রতিবছর দেশে পশু কোরবানি বাড়ছে। অথচ কমছে চামড়া কেনায় ঋণের পরিমাণ। নিয়ম মতো ঋণ পরিশোধ না করায় চামড়ার ঋণে সক্ষমতা হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে চামড়া কেনায় ৫৫৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানার চারটি ব্যাংক। এবার তার অর্ধেকেরও কম ঋণ দিতে চায় তারা। সব মিলিয়ে ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এ ব্যাংকগুলো। যদিও এ পরিমাণ ঋণও শেষ পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অনেকে।
ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে কেবল ঋণ নিয়মিত থাকা ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার ঋণ পেয়ে থাকেন। নতুন করে ভালো কোনো গ্রাহক পেলে তাকেও ঋণ দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদর আবেদন যাচাই করে ঈদের দু-একদিন আগে অর্থ ছাড় হয়। ৯ মাসের জন্য দেওয়া এ ঋণে আশানুরূপ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলো আগের মতো ঋণ দিতে চায় না। এর মধ্যে চামড়ার দর অনেক কমে যাওয়ায় আগের মতো ঋণের প্রয়োজনও পড়ছে না। এ ছাড়া চামড়া কেনার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনেক সতর্ক। এসব কারণে প্রতিবছর দেশে পশু কোরবানির সংখ্যা বাড়লেও ঋণের পরিমাণ কমছে
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা প্রস্তুত রেখেছে। গত বছর একই পরিমাণ প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত বিতরণ হয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ব্যাংকটি দেয় ২০৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। ২০১৯ সালে দেয় ১৫৫ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংক দেবে ৭০ কোটি টাকা। করোনা শুরুর আগের বছর ব্যাংকটি দেয় ১৩০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। ২০১৯ সালে যেখানে দিয়েছিল ৭০ কোটি টাকা। মূলত এই চারটি ব্যাংকই চামড়া কেনায় ঋণ দেয়। এর বাইরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিলেও তার পরিমাণ খুবই কম। মূলত ১৯৯০ দশকে বিতরণ করা চামড়ার ঋণের বেশিরভাগই ফেরত না আসায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ খাতে আগ্রহ হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার সক্ষমতা কমছে। এখন ঋণসীমা বাড়ানো দরকার। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বৈঠকে বিষয়টির সমাধান চেয়েছেন তারা। তিনি জানান, গত বছর পরিশোধ করেছিলেন- এরকম ব্যবসায়ীদের এবার ১৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যে পরিমাণ পরিশোধ করেছেন, নতুন করে সমপরিমাণ ঋণ পাচ্ছেন।
জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এবার গত বছরের সমান ঋণ বিতরণের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান তিন কোটি টাকার জন্য আবেদন করেছে। তিনি বলেন, কোনো ঋণ খেলাপিকে ব্যাংক চাইলেও ঋণ দিতে পারে না। গত বছরও ব্যাংকটি ১২০ কোটি টাকা ঋণের জন্য প্রস্তুত থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়।
চামড়া খাত সংশ্নিষ্টদের মতে, হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি কারখানা স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে এ খাতে জটিলতা তৈরি হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ট্যানারি শিল্পের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এরকম প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে চামড়ার ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য কারও যদি সীমা থাকে ১০০ কোটি টাকা, আগেই যদি তিনি পুরো সীমার আলোকে ঋণ নিয়ে থাকেন, তাহলে সীমা বৃদ্ধি না করে শুধু পুনঃতপশিল করে নতুন ঋণ পাবেন না। তবে কেউ ১০০ কোটি টাকা সীমার বিপরীতে হয়তো ৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন। সুদসুহ হয়তো ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এখন দুই শতাংশ হারে ডাউনপেমেন্ট দিয়ে পুনঃতপশিল করে সীমার বাকি অংশ তথা ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিতে পারবেন।